ঘুমের শুরুতে শরীর ঝাঁকুনি দেওয়ার কারণ ও সহজ প্রতিকার

ঘুমের শুরুতে মানুষের শরীর কেন ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠে?

ঘুমের শুরুতে হঠাৎ শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া বা কেঁপে ওঠা একটি সাধারণ ঘটনা, যা অনেকেই অনুভব করেন। এ ঘটনাটি বৈজ্ঞানিক ভাষায় হাইপনিক জার্ক (Hypnic Jerk) বা হিপনিক মায়োক্লোনাস নামে পরিচিত। এটি সাধারণত নির্দোষ এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ। তবে এটি কেন ঘটে এবং কীভাবে প্রতিকার করা যায়, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।

কেন শরীর ঝাঁকুনি দেয়?

ঘুমের শুরুর দিকে শরীর ঝাঁকুনি দেওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

১. স্নায়ুতন্ত্রের শিথিল হওয়া:

ঘুমে ঢোকার সময় মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো মস্তিষ্কের ভুল সংকেতের কারণে মাংসপেশি হঠাৎ সংকুচিত হয়ে ঝাঁকুনি দেয়।

২. চাপ বা দুশ্চিন্তা:

মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থাকলে মস্তিষ্ক সচল থাকার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় ঘুমের শুরুতে শরীরের ঝাঁকুনি সৃষ্টি হতে পারে।

৩. ক্যাফেইনের প্রভাব:

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ স্নায়ুকে উত্তেজিত করে। এটি হাইপনিক জার্কের একটি কারণ হতে পারে।

৪. ক্লান্তি বা ঘুমের অভাব:

অতিরিক্ত শারীরিক ক্লান্তি বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে হাইপনিক জার্ক দেখা দিতে পারে।

৫. শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া:

মস্তিষ্ক কখনো শরীরের শিথিলতাকে "পতন" বা বিপদ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করে। এতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শরীরের ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয়।

এই ঘটনা কতটা বিপজ্জনক?

হাইপনিক জার্ক সাধারণত স্বাভাবিক এবং ঝুঁকিমুক্ত। তবে যদি এটি ঘন ঘন ঘটে বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে, যদি এর সঙ্গে অন্য উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা বা ঘুমের অন্যান্য সমস্যা যুক্ত থাকে।

প্রতিকারের উপায়

হাইপনিক জার্ক কমানোর জন্য কিছু কার্যকর উপায়:

  1. পর্যাপ্ত ঘুমান: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
  2. মানসিক চাপ কমান: মেডিটেশন বা রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন।
  3. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: বিশেষ করে সন্ধ্যার পর।
  4. পরিষ্কার ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন: একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  5. শরীরকে শিথিল করুন: ঘুমের আগে হালকা স্ট্রেচিং বা স্নান করুন।

ঘুমের শুরুতে শরীরের ঝাঁকুনি দেওয়ার ঘটনা সাধারণত বিপদজনক নয়। এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ। তবে এটি যদি দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভালো ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এ সমস্যাটি সহজেই এড়ানো সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url